প্রিয় ছাত্রছাত্রী,
যারা তোমরা এখন ক্লাস টেনে পড়ো সামনেই তোমাদের প্রথম ইউনিট টেস্ট পরীক্ষা, আজকের প্রতিবেদন তোমাদের জন্যই, এই প্রতিবেদন পুরোটি পড়লে তোমরা তোমাদের জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে ।
১। বাহ্যিক উদ্দীপক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক কাকে বলে?
উত্তর- বাহ্যিক উদ্দীপকঃ এই উদ্দীপক বাইরে থেকে জীবদেহকে উদ্দীপিত করে। যেমন- যেকোন লতানে গাছ (যেমন লাউ,কুমড়ো, মটর) কোন শক্ত অবলম্বন পেলে তাকে জড়িয়ে বেড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে এই শক্ত অবলম্বনই হল বাহ্যিক উদ্দীপক। অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকঃ এই উদ্দীপক উদ্ভিদের দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়। যেমন- অক্সিন হরমোনের প্রভাবে গাছের কাণ্ড বৃদ্ধি পায়। হরমোন হল অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
২। সংবেদনশীলতা বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর- প্রাণীদের মতো উদ্ভিদরাও পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন শনাক্ত করে, পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযথ সাড়া প্রদান করে। এইসাড়াপ্রদানের ক্ষমতা বা বিশেষ ধর্মকে বলা হয় সংবেদনশীলতা।যেমন- পতঙ্গভুক উদ্ভিদ ড্রসেরার (সূর্যশিশির) উপর পতঙ্গ এসে বসলে ঐ উদ্ভিদ তা ঠিক বুঝতে পারে এবং ধীরে ধীরে তার কর্ষিকা দিয়ে সেই পতঙ্গকে গ্রাস করে নেয়। এ ক্ষেত্রে পতঙ্গ হল উদ্দীপক আর ধীরে ধীরে কর্ষিকা দিয়ে ঐ পতঙ্গকে জড়িয়ে ধরাহল, উদ্দীপনা প্রকাশ করা বা উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া। উত্তেজনায় এই সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বা ধর্মই হল সংবেদনশীলতা।
৩। ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর- ট্রপিক চলনের বৈশিষ্ট্য-
১) এটি উদ্ভিদদেহের একপ্রকার বক্রচলন
২) এটি বহিস্থ উদ্দীপক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চলন
৩) এটি উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে নিয়ন্ত্রিত চলন
৪) এই চলন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে যেমন মূল, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ইত্যাদিতে লক্ষ্য করা যায়।
ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য-
১) এটি উদ্ভিদদেহের একপ্রকার বক্রচলন অর্থাৎ উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে।
২) বহিস্থ উদ্দীপক যেমন আলো, উষ্ণতা, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি দ্বারা এই চলন নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩) এই চলন উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চলন
৪। চলনের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর- উদ্ভিদ গমন করতে সক্ষম নয় তাই উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া, বৃদ্ধির জন্য ও বিভিন্ন ক্রিয়া যেমন- সালোকসংশ্লেষ ইত্যাদি সম্পাদনের জন্য উদ্ভিদের চলন হয়।
বৃদ্ধির জন্য- উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য চলন হয়। কাণ্ডের বৃদ্ধি হল অভিকর্ষ প্রতিকূলবর্তী চলন এবং মূলের বৃদ্ধি অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী চলন।
উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া- সূর্য, জল ইত্যাদি হল প্রধান উদ্দীপক। এদের প্রভাবেই উদ্ভিদ সাড়া প্রদান করে। যেমন- সূর্যমুখী ফুলের সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা, মূলের জলের দিকে অগ্রসর, কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখার সূর্যের দিকে বেঁকে যাওয়া। এছাড়াও স্পর্শ, আলোর তীব্রতা ও গতিপথ ইত্যাদিও উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। যেমন- লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে বুজে যায়।
৫। হরমোনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর- হরমোনের বৈশিষ্ট্য হল-
i) উৎস- প্রাণী হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবংউদ্ভিদ হরমোন সজীবকোশে সংশ্লেষিত হয়, যেমন- উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চল অর্থাৎ মূল, কাণ্ডের অগ্রস্থ ভাজক কলা ইত্যাদি।
ii) প্রকৃতি - উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত অম্ল বা ক্ষারীয় জৈব পদার্থ হয়। প্রাণী হরমোন অ্যামাইনো অ্যাসিড, পেপটাইড, স্টেরয়েড ইত্যাদি প্রকৃতির হয়।
iii) কাজ- উভয় হরমোনই কোশের বিপাক ক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে।
iv) পরিবহন- দেহতরলের মাধ্যমে উৎপত্তিস্থল থেকে হরমোন দূরে পরিবাহিত হয়।
v) পরিণতি - উদ্ভিদ ও প্রাণী হরমোন উভয়ই হরমোনই ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
৬। জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস ও দুটি কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর - জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের পরিণত বীজে ও বীজপত্রে, পাতার ভাজক কলায় পাওয়া যায়।
দুটি কাজ হল-
ক) উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা দূরীকরণ : কোন উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা জিব্বেরেলিন দূর করতে পারে। জিব্বারেলিন দুটি পর্বের মধ্যবর্তী স্থানে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারা কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধি করে ফলে পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। এই ভাবে জিব্বেরেলিন উদ্ভিদ কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়।
খ) ফলের আকার বৃদ্ধি: জিব্বেরেলিনের প্রয়োগে আঙুর, আপেল, ন্যাসপাতি প্রভৃতি ফলের ফল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ফলের আকারও বৃদ্ধিপায়। যেমন GA3 প্রয়োগে আঙুরের বৃন্তের বৃদ্ধি ঘটে ফলে আঙুরের থোকা বড় হয় (অর্থাৎ আঙুরের থোকায় আঙুরের সংখ্যারবৃদ্ধি ঘটে) আবার আঙুরের আকারও বৃদ্ধি পায়।
৭। উদ্ভিদদেহে হরমোনের সাধারণ কাজগুলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর- উদ্ভিদদেহে হরমোনের সাধারণ কাজগুলি হল-
ক) বৃদ্ধি- অক্সিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে কোশ বিভাজন ত্বরান্বিত করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটানো। এছাড়া অক্সিন সেলুলোজ জাতীয় উৎসেচকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে, ফলে কোশ আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন হরমোনও উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খ) ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ- অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের জিওট্রপিক ও ফটোট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের বক্র চলন হয় তখন তাকে জিওট্রপিক চলন বলে। অক্সিন বিটপ অঞ্চলে সংশ্লেষিত হয়ে নীচের দিকে নেমে এসে মূলের অগ্রভাগে পৌঁছোয়। কম ঘনত্বের অক্সিন মূলে অধিক কোশ বিভাজন ঘটায় তাই মূলের অগ্রভাগ অপেক্ষা মূলের উপরের অংশে অধিক বৃদ্ধি ঘটে। তার ফলে মূল মাটির নীচের দিকে অগ্রসর হয়।আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের যে বক্র চলন ঘটে তাকে বলা হয় ফটোট্রপিক চলন। কান্ডে আলো যেখানে পড়ে অক্সিন তার বিপরীত দিকে চলে যায়। অন্ধকার অঞ্চলে অক্সিন বেশী পরিমাণে সঞ্চিত হতে থাকে অর্থাৎ ঐ অঞ্চলে অক্সিনের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। বেশি মাত্রায় সঞ্চিত অক্সিন কান্ডের ওই অঞ্চলের কোশগুলির দ্রুত বিভাজন ঘটায়। ফলে উদ্ভিদের কান্ড আলোর উৎসের দিকে বেঁকে যায়।
গ) জরা প্রতিরোধ- বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাছের পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে গিয়ে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। কিন্তু সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে সাইটোকাইনিন ক্লোরোফিল বিনষ্টকারী ক্লোরোজিনেস উৎসেচকের ক্রিয়াকে বিনষ্ট করে। ফলে পাতা দীর্ঘদিন সতেজ থাকে। তাই ফুলদানিতে পাতাবাহার গাছ বা ফুলের শাখাকে সতেজ রাখতে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করা হয়।
ঘ) জিনগত খর্বতা দূরীকরণ- কোন উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা জিব্বেরেলিন দূর করতে পারে। জিব্বারেলিন দুটি পর্বের মধ্যবর্তী স্থানে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারা কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধি করে, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। এই ভাবে জিব্বেরেলিন উদ্ভিদ কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়।
ঙ) সাইটোকাইনিন কোশ বিভাজন সাহায্য করে- সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের কোশ চক্রের ১ দশায় DNA এর সংশ্লেষ ঘটায়। এছাড়া সাইটোকাইনিন সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়াতে সহায়তা করে।
৮। "ইনসুলিন ও গ্লুকাগন পরস্পর বিপরীতধর্মী কাজ করে"- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- গ্লুকাগন ইনসুলিনের বিপরীত কাজ করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস পেলে গ্লুকাগন যকৃত ও পেশীকোশে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস পদ্ধতিতে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে, নিওগ্লুকোজেনেসিস পদ্ধতিতে ফ্যাট, প্রোটিন ইত্যাদি অশর্করা বস্তু থেকে শর্করা বা গ্লুকোজ প্রস্তুত করে।আর রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ইনসুলিন গ্লুকোজকে একক শর্করার পলিমার গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে এবং নিউগ্লুকোজেনেসিস পদ্ধতি দ্বারা গ্লুকোজ সংশ্লেষে বাঁধা দেয়। এইভাবে ইনসুলিন রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় ও গ্লুকাগন রক্ত শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।
৯। হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ ধর্মটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- যখন কোনো একটি গ্রন্থির হরমোন ক্ষরণ পরোক্ষভাবে অপর একটি হরমোন ক্ষরণকারী গ্রন্থির হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন সেই প্রক্রিয়াকে দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ বা ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। যেমন- অগ্র পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত TSH দ্বারা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নির্গত থাইরক্সিন হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ।
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ দু-প্রকার হয়। যথা- ধনাত্মক ফিডব্যাক ও ঋণাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ।
ধনাত্মক ফিডব্যাক একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক। রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হলে থাইরক্সিন হাইপোথ্যালামাসকে TRH ক্ষরণে উদ্দীপিত করে ফলে TRH ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে পিটুইটারি থেকে TSH ক্ষরণও বেড়ে যায়। TSH থাইরয়েডকে থাইরক্সিন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে, ফলে রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়। এটি হল ধনাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ।
ঋণাত্মক ফিডব্যাক রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে TRH কম ক্ষরণ হয়, ফলে TSH ক্ষরণও বাধা প্রাপ্ত হয়। TSH ক্ষরণ বাধা পেলে থাইরয়েড থেকে থাইরক্সিন নিঃসরণ বন্ধ হয়। এটি হল ঋণাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ।
১০। । জরুরীকালীন হরমোন কাকে বলে। এর দুটি কাজ লেখ।
উত্তর- উত্তেজনা, রাগ, ভয়, আবেগ, হতাশা প্রভৃতি তাৎক্ষণিক মুহূর্তে অ্যাড্রেনালিন ক্ষরিত হয়ে রক্তের সাথে মিশে গিয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহকে ওই অবস্থার সঙ্গে মানানসই হতে সাহায্য করে বলে অ্যাড্রেনালিনকে জরুরীকালীন হরমোন বলে।
কাজ- i) এই হরমোন হৃৎস্পন্দনের হার ও হার্দ উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
ii) ব্রংকিওলকে প্রসারিত করে শ্বাস ক্রিয়ার হার বাড়ায়।
১১। । উপযোজন কি? তিনটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- স্থান পরিবর্তন না করে অক্ষিগোলকের পেশি ও লেন্সের সাহায্যে যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে থাকা বস্তুকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় তাকে উপযোজন বা Accomodation বলে।
উদাহরণ- i) গাড়িচালকেরা গাড়ি চালানোর সময় চোখের উপযোজন ঘটিয়ে, দূর থেকে আসা গাড়ি ও তার গাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারী উভয়কেই লক্ষ্য করে নিরাপদভাবে গাড়ি চালাতে পারে।
ii) পথচারীরা দূরের ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে সাবধানে রাস্তা পারাপার করে চোখের উপযোজন ঘটিয়েই।
iii) কম্পিউটারের সামনে কাজ করলে বা গেম খেললে, চোখ উপযোজন ঘটিয়ে সেটি সঠিকভাবে দেখতে সাহায্য করে।
১২। । মানবদেহের গমনে বিভিন্ন পেশীর ভূমিকা বর্ণনা করো।
উত্তর- মানুষের দ্বিপদ গমনের সময় পা দুটি সঞ্চালনের জন্য কয়েকটি কঙ্কাল পেশি (Skeletal muscle) সাহায্য করে।
মানুষের দেহের কঙ্কাল বা অস্থির সাথে যে সমস্ত পেশি সংযুক্ত থাকে, তাদের কঙ্কাল পেশি বলে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে এই পেশি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পেশির মাঝের অংশ স্কুল এবং দুই প্রান্ত অপেক্ষাকৃত সরু হয়। সরু প্রান্ত দুটির সঙ্গে দড়ির মতো কিছু অংশ যুক্ত থাকে, যাকে কন্ডরা বা Tendon বলে। এই কন্ডরার সাহায্যে পেশিগুলি অস্থির সাথে সংলগ্ন থাকতে পারে। কঙ্কাল পেশি বিভিন্ন প্রকারের পেশি সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে।
ক) ফ্লেক্সর পেশি - যে প্রক্রিয়ায় পেশি সংকুচিত হয়ে দুটি অস্থি কাছাকাছি আসে তাকে ফ্লেক্সন বলে। যে সমস্ত পেশী এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাদের ফ্লেক্সর পেশি বলে। যেমন- হাতের বাইসেপস, পায়ের বাইসেপস ফিমোরিস। এই পেশি দুটির সংকোচনের ফলে হাতের কনুই এবং পায়ের হাঁটু ভাঁজ হতে পারে।
খ) এক্সটেনসর পেশি যে প্রক্রিয়ায় পেশি সংকুচিত হলে নিকটবর্তী অস্থিগুলি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় তাকে এক্সটেনশন বলে। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পেশিগুলোকে এক্সটেনসর পেশি বলে। যেমন- হাতের ট্রাইসেপস, পায়ের এক্সটেনসর ডিজিটোরিয়াম। এই পেশি দুটির সংকোচনে হাত এবং পা ভাঁজ করা অবস্থা থেকে সোজা হয়।
গ) অ্যাবডাকটর পেশি যে প্রক্রিয়ায় কোন অঙ্গ দেহের মধ্যরেখা থেকে অনেকটা দূরে সরে যায় তাকে অ্যাবডাকশন বলে। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পেশীগুলিকে অ্যাবডাকটর পেশি বলে। যেমন- ডেলটয়েড পেশি। এই পেশির কার্যকারিতার ফলে মানুষের হাত দেহের মধ্যরেখা থেকে অনেকটা দূরে সরে যায়।
ঘ) অ্যাডাকটর পেশি যে প্রক্রিয়ায় কোন অঙ্গ দেহের মধ্যরেখার কাছাকাছি সরে আসে তাকে অ্যাডাকশন বলে। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পেশীগুলি অ্যাডাকটর পেশি নামে পরিচিত। যেমন- ল্যাটিসিমাস ডরসি, পেক্টোরালিস মেজর। এই পেশিগুলি হাতকে দেহের মধ্যরেখার কাছাকাছি নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
ঙ) রোটেটর পেশি যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে দেহের কোন অংশ একটি অক্ষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে সক্ষম হয়, তাকে রোটেশন বলে। রোটেশনে অংশগ্রহণকারী পেশীগুলি রোটেটর পেশি নামে পরিচিত। যেমন- পাইরিফরমিস পেশি। এই পেশির সাহায্যে ফিমার আবর্তিত হতে পারে। আমরা যে ঘাড় ও মাথা পিছন দিকে ঘোরাতে পারি তাও এক প্রকারের রোটেশন। আর এই ঘূর্ণন স্টারনোক্লিডোম্যাসটয়েড এবং স্পেনিয়াস নামক পেশি দুটির সাহায্যে ঘটে।
১৩। । গমনের উদ্দেশ্য কি?
উত্তর-ক) খাদ্যের প্রয়োজনে- উদ্ভিদরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা প্রস্তুত করতে সক্ষম হলেও, প্রাণীরা পরভোজী হওয়ায় খাদ্যের প্রয়োজনে তাদের অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই খাদ্যের সন্ধানে প্রাণীদের (শাকাশী বা মাংসাশী) একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করতে হয়। তাই খাদ্য গমনের চালিকাশক্তি।
খ) বাসস্থান - প্রাণীরা তাদের জীবন ধারণের সুবিধার জন্য উপযুক্ত পরিবেশে নিজেদের বাসস্থান গড়ে তুলতে চায়। তাই বাসস্থান খোঁজা এবং নির্মাণের জন্য তাদের গমনের প্রয়োজন হয়। তাই বাসস্থান গমনের চালিকাশক্তি।
গ) অনুকূল পরিবেশের সন্ধান সমস্ত প্রাণীরা বসবাসের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে থাকে। তাই পরিবেশের প্রতিকূলতার হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে জীবকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করতে হয়। যেমন- গ্রীষ্মকালে জলাশয়ের একাংশের জল শুকিয়ে গেলে, ওই জলাশয়ের মাছ এবং অন্যান্য জলচর প্রাণীরা জলাভূমির যেদিকে অপেক্ষাকৃত বেশি জল রয়েছে, সেদিকে গমন করে। তাই অনুকূল পরিবেশও গমনের চালিকাশক্তি।
ঘ) আত্মরক্ষা - শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রাণীদের একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হয়। তাই আত্মরক্ষা হল গমনের চালিকাশক্তি।
ঙ) প্রজনন ও বংশবিস্তার প্রজননের প্রয়োজন সমস্ত প্রাণীরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে উপযুক্ত প্রজনন স্থান এবং সঙ্গী নির্বাচন করে। যেমন- স্যালমন নামক এক ধরনের মাছ এবং অলিভ রিডল টার্টেল তাদের উপযুক্ত প্রজনন স্থানের সন্ধানে সমুদ্রে দীর্ঘপথ সাঁতার কেটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। এছাড়াও ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদীতে প্রবেশ করে।
No comments:
Post a Comment